বিশেষ প্রতিনিধি যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার আবাসিক শিক্ষক আসাদুল ইসলাম (৩৪)। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী তাকে শিক্ষক হিসেবে সম্মান করতেন। কিন্তু শিক্ষকতার আড়ালে প্রতারণা করে আসছিল আসাদুল। অনলাইনে মোবাইল বিক্রির বিজ্ঞাপন ও পোস্ট দিয়ে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিতো সে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে আসাদুল। অবশেষে শুক্রবার রাতে যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার বিভাগ। তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ও দুটি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি বলছে, চক্রটি অন্যের নামে নিবন্ধিত সিম কার্ড ব্যবহার করে ও ভুয়া ফেসবুক আইডিতে মোবাইল বিক্রির ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করত। এই চক্রের মূলহোতা শিক্ষক আসাদুল ইসলাম। মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চায় ডিবি। তবে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। চক্রে আরও কয়েকজন রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।ডিবি জানায়, চক্রের সদস্যরা প্রথমে বিক্রয়.কম সহ অন্যান্য প্লাটফর্মে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি খুলত। এরপর বিভিন্ন রকমের মোবাইলের ছবি পোস্ট করে সেসব বিক্রি হবে বলে আকর্ষণীয় পোস্ট দিতো। বিজ্ঞাপন কিংবা পোস্ট দেখে কেউ ওই মোবাইল ক্রয়ের ইচ্ছাপোষণ করলে চক্রটি তাকে একটি বিকাশ নাম্বার প্রদান করত। ওই নাম্বারে প্রথমে অল্প কিছু টাকা পাঠাতে বলতো। গ্রাহকের পছন্দ হওয়া মোবাইলটি তাকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে বলে আশ্বাস দিতো। এরপর কুরিয়ার সার্ভিসে বুকিং করা হয়েছে বলে ভুয়া রশিদের ছবি গ্রাহকের হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে বাকি টাকা দাবি করত। ক্রেতা কুরিয়ার সার্ভিসের রশিদ দেখে বাকি টাকা প্রতারককে বিকাশে প্রেরণ করত। পরবর্তীতে গ্রাহক সেই রশিদ নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসে গেলে জানানো হতো, রশিদটি ভুয়া এবং তিনি প্রতারিত হয়েছেন। পরে যেই ব্যক্তির কাছ থেকে ফোনটি ক্রয় করেছেন, তাকে ফোনে-হোয়াটসঅ্যাপসহ কোনভাবেই পাওয়া যেতো না।
সম্প্রতি অনলাইন থেকে মোবাইল কিনতে গিয়ে এরকম প্রতারণার শিকার হন মোঃ সাহিদ। মাও মাহমুদ হাসান নামীয় একটি ফেসবুকে মোবাইল বিক্রির পোস্ট দেখে তিনি ওই ফেসবুক আইডির অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে ও ইমুকে ভিডিও কথাও বলেন। পরবর্তীতে ওই ব্যক্তির নাম্বারে ১৭ হাজার ৭০০ টাকা পাঠান। কিন্তু অজ্ঞাত ব্যক্তির পাঠানো রশিদ নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসে গেলে তারা জানায়, রশিদটি ভুয়া। প্রতারিত হওয়ার পর সাহিদ সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করেছেনডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোঃ নাজমুল হক জানান, গ্রেফতার আসাদুল অতি সকর্তার সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। প্রায় দুই বছরে অনেকেই তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন। তাকে এ বিষয়ে অতিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনলাইন থেকে কেনাকাটা করা গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ক্যাশ অন ডেলিভারীর মাধ্যমে পণ্য গ্রহণ করলে, বাস্তবের তুলনায় দাম কম এবং স্বাভাবিক নয় এমন বিজ্ঞাপন ও দ্রুত অর্থ পরিশোধ করতে হবে, এমন প্রতিশ্রুতি এড়িয়ে চললে এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।